সর্বশেষ

নির্বাচন মোকাবিলা 'বিএনপির বড় চ্যালেঞ্জ'

/ ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ/

প্রকাশ :


২৪খবরবিডি: 'আগামী সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আবার ঘুরে দাঁড়াতে চায় রাজনীতিতে 'কোণঠাসা' বিএনপি। নানামুখী তৎপরতা অব্যাহত রাখলেও দলটি এখনও 'পরিস্থিতি' সামলে উঠতে পারেনি; বরং ওয়ান-ইলেভেনের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে ধকল কাটানোর চেষ্টার মধ্যেই দলের ভেতর নতুন 'সংকট' ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।'
 

'শীর্ষ নেতৃত্বের সশরীরে অনুপস্থিতির সংকট তো রয়েছেই। নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের দাবিতে সরকারবিরোধী দলগুলোর সঙ্গে 'বৃহত্তর ঐক্য' গড়ে যুগপৎ আন্দোলনের চেষ্টায়ও তারা জুড়ে দিচ্ছে নানা শর্ত। দেশি-বিদেশিদের সমর্থন আদায়েও একই অবস্থান। অবশ্য শর্তানুযায়ী দেশের প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে একসময়ের অন্যতম মিত্র জামায়াতে ইসলামীকেও দূরে সরিয়ে রাখার কৌশল নিয়েছে। রাজপথের কর্মসূচিতে হামলা-মামলা ও গ্রেপ্তার সামলাতে নাকাল অবস্থা দলটির। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ বৃহস্পতিবার। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনে এবার দু'দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিএনপি। প্রতিষ্ঠার চার দশক পর সময়ের প্রয়োজনে ও অন্যান্য দলের প্রস্তাবনাকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়ে রাজনীতির গুণগত মানোন্নয়নে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনায় কাঠামোগত সংস্কারের ইঙ্গিতও দিচ্ছে তারা। চলমান আন্দোলনে যারা পাশে থাকবে, তাদের নিয়ে 'জাতীয় সরকার' গঠনের আশ্বাস দিয়েছে। এসব নানামুখী উদ্যোগের পরও ক্ষমতাসীন দলের কঠোর অবস্থানের কারণে 'দাঁড়াতে' পারছে না তিনবার রাষ্ট্র পরিচালনা করা বিএনপি। দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল ও সন্দেহ-সংশয় তো রয়েছেই। নির্বাচন সামনে রেখে ওয়ান-ইলেভেনের মতো আবারও দলের ভেতর ভাঙনের চেষ্টা চলছে। সার্বিক প্রতিকূল পরিস্থিতি অনুকূলে এনে নিজেদের দাবি আদায় করে নির্বাচনে অংশ নেওয়াই দলটির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।'


'অবশ্য এ নাজুক পরিস্থিতির জন্য সরকারের নির্যাতন ও নিপীড়নকে দায়ী করছে বিএনপি। দলের নেতাদের দাবি, সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে বর্তমানে লক্ষাধিক মামলায় দলের প্রায় ৩৫ লাখ আসামি, হামলায় সহস্রাধিক নিহত, ছয় শতাধিক গুম এবং হাজার হাজার নেতাকর্মী গ্রেপ্তার ও আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আদায়ই দলটির প্রধান দাবি। দেশ 'গণতন্ত্রহীন' দাবি করে 'গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার' করতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে জনমত তৈরি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রশাসনকে নিরপেক্ষ করা দলটির সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ বলেও মনে করেন শীর্ষ নেতারা। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বিষয়ে দলের নেতারা বলছেন, অতীতের অভিজ্ঞতা ও সময়ের প্রয়োজনে রাজনৈতিক সংস্কারের বিষয়ে কাজ করছেন তাঁরা। রাজনৈতিক বিশ্নেষকরা বলছেন, বিএনপিকে অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগোতে হবে। জনগণের দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের শূন্যতা পূরণ করতে হবে। ১৯৭৮ সালের এই দিনে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী খালেদা জিয়া রাজনীতিতে এসে দলটির হাল ধরেন। তাঁর নেতৃত্বে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দু'বার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হয় বিএনপি।'

 

'দুর্নীতির মামলায় শর্তসাপেক্ষে জামিনে বাসায় থাকলেও সক্রিয় রাজনীতিতে নেই তিনি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে ছেলে তারেক রহমান ভার্চুয়াল মিটিংয়ের মাধ্যমে দল পরিচালনা করলেও সক্রিয় অনুপস্থিতির শূন্যতা পূরণ হচ্ছে না। যদিও দলের নেতারা দাবি করছেন, এখন ডিজিটাল যুগে সশরীরে উপস্থিতির কাজ ভার্চুয়ালি সম্ভব হয়ে যাচ্ছে।' ১৯৮১ সালে দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর প্রথমবার সংকটে পড়েছিল বিএনপি। আশির দশকে জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পরও দ্বিতীয়বার গভীর সমস্যার মুখে পড়েছিল দলটি। ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেনের সময় খালেদা জিয়াসহ বিপুলসংখ্যক শীর্ষ নেতা কারাবন্দি হলে তৃতীয় দফা দলটি নেতৃত্ব সংকটে পড়েছিল। তিন দফাই ভাঙনের মুখে পড়েছিল দলটি। এভাবে নানা সংকট ও ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়েই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে বিএনপি। এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৪খবরবিডিকে বলেছেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯ দফা কর্মসূচি নিয়ে বিএনপি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশবাসীকে বহুদলীয় গণতন্ত্র চর্চার পথ খুলে দিয়েছেন। পরে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বিএনপি দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আজ দেশ, গণতন্ত্র ও বিএনপি এক কঠিন সময় অতিক্রম করছে। ভোটারবিহীন একটি সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে বিএনপিকে ধ্বংস করতে নেতাকর্মীদের নির্যাতন ও নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। অতীতের মতো সব সময় সকল চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই বিএনপি সামনে এগিয়ে যাবে। মিথ্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায়ই বিএনপির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ বলে জানান তিনি।'



'ভিশন' নিয়ে প্রশ্ন :ভবিষ্যতে ক্ষমতায় এলে বিএনপি দেশকে কী দেবে- দলটির সেই লক্ষ্য নির্ধারণ ও অর্জনের ক্ষেত্রে এরই মধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন শীর্ষ নেতারা। অবশ্য রাজনৈতিক বিশ্নেষকরা বলছেন, বিএনপি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য, পরিকল্পনা এবং ছায়া সরকার দৃশ্যমান করতে পারছে না। মানুষকে নতুন কিছু দেওয়ার পরিকল্পনা ও স্বপ্ন দেখাতে বড় উদ্যোগও দৃশ্যমান নয়। 'অবশ্য বিএনপি নেতারা বলছেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানের বক্তব্যে দেশ ও দলের বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তারা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছে। এরই মধ্যে যুগপৎ আন্দোলনের ব্যাপারেও প্রাথমিকভাবে ২২ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে জেএসডি, নাগরিক ঐক্যসহ অনেকেই যুগপৎ কর্মসূচির ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন। ২০ দলীয় জোটকে অকার্যকর রাখলেও নতুন করে সমমনা বড় মিত্র পেতে যাচ্ছে তারা। দলগুলো বিএনপির 'ভিশন' অনুযায়ী রাষ্ট্র-কাঠামো সংস্কারের বিষয়ে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে, যা শিগগির কর্মসূচি আকারে ঘোষণা করা হবে।'
 

'বিএনপির সামনে এখন একটি মাত্র চ্যালেঞ্জ- এই মিত্র শক্তিকে যুগপৎভাবে আন্দোলনের কর্মসূচিতে রাজপথে নামানো। সরকারও এরই মধ্যে তাদের পরিকল্পনা টের পেয়ে নিত্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে চলমান কর্মসূচিতে নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে বলে দাবি করেন দলটির নেতারা। তাঁদের মতে, এতে দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ম্ফূর্তভাবে যোগ দিচ্ছে। সরকারি দলকে মোকাবিলা করে রাজপথে থাকার দৃঢ়তা দেখানোর চেষ্টা হিসেবে প্রমাণ করতে চান তাঁরা। অন্যদিকে হামলা-মামলার মধ্য দিয়ে সরকারি দলও রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়াত্ব প্রমাণিত হচ্ছে বলে দাবি বিএনপির। দলটির নেতারা মনে করেন, এ পরিস্থিতিতে দেশে ও বিদেশে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা এক নতুন পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়া আন্দোলনের উত্তাপ তাঁদের দাবি আদায়ে কতটা সফলতা আনতে পারে- তাও বুঝতে পারবে বিএনপি। নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় পর্যন্ত রাজপথ দখলে নেওয়া এবং দখল ধরে রাখাই বিএনপির জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ। তবে রাজনৈতিক বিশ্নেষকরা বলছেন, ভবিষ্যতে সরকার গঠনের লক্ষ্য থাকলেও তখন বিএনপি কী করবে- তা স্পষ্ট করতে পারছে না; নতুন প্রজন্মকে এবং জনগণকে কাছে টানতে পারছে না। খালেদা জিয়া 'ভিশন ২০৩০' শীর্ষক এক রূপকল্প প্রকাশ করলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। সারাদেশে বিএনপির কর্মী-সমর্থক ও সংগঠন বাড়লেও দলটি মূল লক্ষ্য অর্জন করতে পারছে না।'অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দেশি-বিদেশিদের চাপের মুখে ছিল বিএনপি।


'জামায়াতে ইসলামীকে বাইরে রেখে জোটের বদলে যুগপৎ কর্মসূচিতে রাজি করানো 'বিরাট অর্জন' করে বলে মনে করছেন দলটির নেতারা। রাজপথে তাঁদের মতে, সরকারি দল জামায়াতকে দিয়ে বিএনপিকে 'ঘায়েল' করতে চাচ্ছিল। সে সুযোগ সরকারকে দেননি তাঁরা। সে ইস্যুটি অত্যন্ত কৌশলে জামায়াতের সঙ্গে বিনা বিরোধে নিষ্পত্তি করায় সরকার

নির্বাচন মোকাবিলা 'বিএনপির বড় চ্যালেঞ্জ'

'ব্যাকফুটে' চলে গেছে বলে দাবি করেন তাঁরা।' নামানোই চ্যালেঞ্জ বললেন বিশ্নেষকরা :বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্নেষক ড. মাহবুব উল্লাহ ২৪খবরবিডিকে বলেন, বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, দলটি ক্যান্টনমেন্ট থেকে তৈরি হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, দলটি ক্ষমতাচ্যুতও হয়েছে সেই ক্যান্টনমেন্টের লোক জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও জেনারেল মঈন উ আহমেদেরই নেতৃত্বে। অথচ তাঁরা বিএনপি দ্বারাই সুবিধাপ্রাপ্ত।'

 

'এতে প্রমাণিত হয়, বিএনপি সঠিক মানুষকে চিনতে ভুল করেছে। তাদের কাছে সঠিক তথ্য থাকে না বলেই এ জায়গায় দলটির ঘাটতি রয়েছে। বিএনপির সামনে এখন দুটি প্রশ্ন- প্রথমত. বিংশ শতাব্দীর এ সময়ে বিএনপির রাজনীতি কী হবে এবং তা কীভাবে বাস্তবায়ন করবে? দ্বিতীয়ত. অন্য মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্কটা কেমন হবে? আন্দোলনে সফল হলে ভালো নেতা এবং ব্যর্থ হলে খারাপ নেতা হয়ে যাওয়া দলটির সামনে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জনগণকে সচেতন করা এবং রাজপথে নামানো। পাশাপাশি দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সততা সম্পর্কে যেসব প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, তার বিপরীতে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করা।' কর্মসূচি :প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ভোর ৬টায় দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করবে বিএনপি। দুপুর ১২টায় বিএনপির সিনিয়র নেতারা শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও বিশেষ দোয়া করবেন। বিকেল ৩টায় নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে র‌্যালি শুরু হবে। আগামীকাল শুক্রবার বিকেল ৩টায় আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। দলীয় পোস্টার ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। সারাদেশে সব ইউনিট আজ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করবে।'

Share

আরো খবর


সর্বাধিক পঠিত